কক্সবাজারে পাগল সেজে মাদক পাচার : সক্রিয় সিন্ডিকেট

ওমর ফারুক হিরো,ডেইলি কক্সবাজার •

আব্দুর রহিম (২৯) প্রকাশ জিরো পাগলা। রুক্ষ চুল-দাঁড়ি, ছেঁড়া কাপড়, কাধে ভাঙ্গারীর বস্তা সাথে অস্বাভাবিক আচরণ। সবমিলে একজন পাগল। সাধারণ পথচারীরা এই পাগলকে পাশ কেটে গেলেও মাদক পাচারকারী আর মাদকসেবীরা তাকে ঠিকই চিনতে পারে। জিরো পাগলা নামে এই ব্যক্তি মাদক পাচার, সেবন, বিক্রি, চুরি, ছিনতাই সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত।

জীবনে ৭-৮ বার জেল খাটা এই যুবকের রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। যারা কখনো পাগল আবার কখনো টুকাই সেজে মাদক এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালায়। অপকর্মের বেশিরভাগই টাকা ব্যয় হয় মাদক সেবনে। তাদের কারণে শহরের লালদিঘীর পাড়সহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা অপরাধ। আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে এই চক্র আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

গত ৪ এপ্রিল কক্সবাজার সদর মডেল থানার সামনে বজল আহম্মদ নামে এক ব্যক্তির তত্বাবধানে থাকা ভবন থেকে মূল্যবান জিনিস-পত্র চুরি হয়। সিসিটিভি’র ফুটেজে দেখা যায় জিরো পাগলার নেতৃত্বে ৩-৪ জন মিলে চুরি করে। সেই সূত্র ধরে জিরো পাগলা সর্ম্পকে জানতে গিয়ে এসব তথ্য জানা যায়।
আব্দুর রহিম প্রকাশ জিরো পাগলা নামে এই যুবক চট্টগ্রাম শহরের পশ্চিম মাদাবাড়ি’র (২৯ নং ওয়ার্ড) মৃত রমিজ উদ্দিনের ছেলে। দুই ভাই ৪ বোনের মধ্যে তিনি মেজো ছেলে।

আব্দুর রহিম প্রকাশ জিরো পাগলা’র সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯ বছর বয়স থেকে সে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। শুরুর দিকে সিগারেট আর গাঁজা সেবন করলেও পরে নানা ধরণের মাদক সেবন করে।

মাদকের টাকার জন্য ছিনতাই, চুরি সহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করত। জীবনে প্রথম জেলে পড়ে ২০১৩ সালের জুন মাসে। দুই কেজি গাঁজা সহ পুলিশের হাতে আটক হয়ে প্রায় একমাস চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিল।

একই বছর ডিসেম্বরের দিকে ফেনসিডিল সহ পুলিশের হাতে আটক হয়ে কুমিল্লায় কারাগারে ছিল এক মাস ২২ দিন। ছিনতাই ও ছুরিকাঘাতের অপরাধে ২০১৫ সালে ৩ মাসের বেশি ছিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। ২০১৭ সালে মাদক মামলায় ময়মনসিং কারাগারে ১৮ দিন। ২০১৮ সালের ফেনীর সেনাইমুড়ি বাজারে মাদক সহ আটক হয়ে ২ মাস জেলে ছিল। ২০১৮ ছিনতাইকালে হাতে নাতে আটক হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিল। ২০১৯ সাল থেকে কক্সবাজারে অবস্থান করছে জিরো পাগলা। এরই মধ্যে ২ বার জেল হাজতে ছিল।

জিরো পাগলা সহ তার সহযোগিরা শহরের ভ্রাম্যমান মাদক বিক্রয় কেন্দ্র রাখাইন পাড়া পশ্চিম মাছ বাজার, গোলদিঘীর পাড় ও আইবিপি সড়ক সহ বিভিন্ন পয়েন্টের বড় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খুচরা মূলে ইয়াবা আর গাজা ক্রয় করে। পরে ভ্রাম্যমান বিক্রি সহ শহরের লালদিঘীর পাড়স্থ অন্তত ১৫ টি নী¤œ মানের আবাসিক হোটেল ও কটেজ জোনে এসব মাদক বিক্রি ও সেবন করে। এই মাদকের টাকার জন্য তারা ছিনতাই, ছুরিকাঘাত, চুরি, অপহরণ সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে।

জিরো পাগলাদের এই সিন্ডিকেটে রয়েছে রণি প্রকাশ নাক্কাড়া, মোহাম্মদ হাসান, কিরণ মালা, ইসমাইল, আবদুল্লাহ্, খাইরুল আমিন প্রকাশ বতল্লা, ফারুক প্রকাশ ঈদগাঁহ ওয়ালা ফারুক, শুক্কুর, সালমান শাহ্, ফুফন, ফারুক প্রকাশ বাড়–, সাইফুল, নাছির, কালু, রামছা, জনি, আবদুল্লাহ, হৃদয়, সাগর, সাজিদ, শেফায়েত ও বাইতুল্লা।

উল্লেখ্য, এসব অপরাধীদের মধ্যে স¤প্রতি পুলিশ আটক করেছে রনি, আবদুল্লাহ ও বাইতুল নামে ৩ জনকে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, মাদক-ছিনতাই সহ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিনিয়ত আটক করা হচ্ছে অপরাধীদের। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।